Рет қаралды 1,694
কবিতার নাম: "মহান নেতা শেখ মুজিব" কলমে ও কন্ঠে: আমি লায়লা আফরোজ । ১৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ। আজকের এই দিনে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই মহান নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাচিত্তে লেখা আমার এ কবিতাখানি।
মহান ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী দেশে এবং বিদেশে যথাযথ মর্যাদায় উৎযাপিত হবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জের দেওয়ানী আদালতের ‘সেরেস্তাদার’ ছিলেন।
স্কুল জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বের গুণ প্রকাশ পেয়েছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক স্কুল পরিদর্শনে আসেন (১৯৩৮)। তরুণ মুজিব এই অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য একটি বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন।
পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রদেশের নামকরণ পরিবর্তনের প্রতিবাদে শেখ মুজিব গণপরিষদে অন্য একটি ভাষণে (২৫ আগস্ট ১৯৫৫) যা বলেছিলেন তা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। স্যার, দেখবেন তারা ‘পূর্ব বাংলা’র পরিবর্তে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দটি বসাতে চায়। আমরা বহুবার দাবি করেছি যে আপনি [পূর্ব] পাকিস্তানের পরিবর্তে [পূর্ব] বাংলা ব্যবহার করুন। বাংলা শব্দের একটা ইতিহাস আছে, একটা নিজস্ব ঐতিহ্য আছে।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে রাজনৈতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর ক্যারিসম্যাটিক সাংগঠনিক ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগকে আন্তঃদলীয় রাজনীতি থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।
একজন দৃঢ় সংগঠক, শেখ মুজিব দলের উপর তার পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে, তিনি তার বিখ্যাত ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন যাকে তিনি ‘আমাদের’ [বাঙালি] বেঁচে থাকার সনদ বলে অভিহিত করেছেন।
এ সময় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লক্ষাধিক মানুষের বিশাল সমাবেশে মুজিব ঐতিহাসিক ভাষণ দেন যা বাঙালি জাতির ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
মুজিব তাঁর ভাষণে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তোলেন- যা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়। বক্তৃতার শেষে তিনি ঘোষণা করেন: ‘প্রতিটি বসতবাড়িতে দুর্গ গড়ে তুলুন। আপনার হাতে যা আছে তাই দিয়ে পাকিস্তানি শত্রুকে প্রতিহত করতে হবে। মনে রাখবেন, আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজনে আরও অনেক রক্ত দেব, তবে আমরা এদেশের মানুষকে মুক্ত করব, ইনশাআল্লাহ’। ... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
২৬ শে মার্চ থেকে ছাত্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে আসছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বর্বর দমন অভিযান শুরু করে অপারেশন সার্চলাইটের নামে ছাত্র, শিক্ষক ও নিরীহ মানুষ হত্যা করে। এভাবে নয় মাসব্যাপী গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয় এবং ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ ও বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ঢাকা সেনানিবাসে বন্দী করে রাখা হয়।
গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সম্প্রচারের জন্য সাবেক ইপিআর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে একটি ওয়্যারলেস বার্তা প্রেরণ করেছিলেন।
বাংলাদেশের মাটি থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শেষ সৈনিককে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
তাকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডারও করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়কালে শেখ মুজিবের ক্যারিশমা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা এবং জাতীয় ঐক্য ও শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
বঙ্গবন্ধুর বিচারে পাকিস্তানি জান্তা তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল, বিশ্বনেতারা তার জীবন বাঁচাতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি দখলদারিত্ব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং লন্ডন হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সারা দেশে আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে বিজয়ী স্বদেশ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে তিন বছরের স্বল্প সময়ের জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের প্সরকারের নেতৃত্ব দেন। তাঁর সরকারকে গোড়া থেকে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অগণিত সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশে রাষ্ট্র-গঠন, জাতি-গঠনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ শুরু হয়।
আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্গঠন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী লোকদেরকে জনরোষ থেকে বাঁচানো এবং সবচেয়ে বড় কথা, লাখ লাখ ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং আরও অনেক কিছু ছিল তাঁর সরকারের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
এতসব সমস্যার মধ্যেও শেখ মুজিব কখনোই সংবিধান প্রণয়ন করতে পিছপা হননি, যা তিনি দশ মাসের মধ্যে করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির পথপ্রদর্শক নীতি তুলে ধরেন: ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী একদল সেনা তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে, যা দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়।
গৌরবের বিষয় ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।