Рет қаралды 49,465
তাঁত শিল্পের একাল-সেকাল
``ভাদ্র মাসে কাটিলাম সুতা,
আশ্বিন মাসের পয়লাতে,
বাড়ির কাছে তাঁতিয়া ভাইরে,
শাড়ি খ্যান বুইনে দে।''
পাবনার স্থানীয় বয়াতি আবু হানজালার আঞ্চলিক গানটি বলে দেয় তাঁতের জেলা পাবনা। প্রাচিনকাল থেকেই তাঁতের শাড়ি, গামছা ও লুঙ্গীর জন্য বিখ্যাত এ জেলা। যুগের চাহিদায় আগের মত না হলেও, এখনো দেশ ও বিদেশে রয়েছে, পাবনার তাঁতের লুঙ্গীর কদর।
হস্ত চালিত তাঁতের খটখট শব্দে, পাবনায়, ঠিক কবে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল সে ইতিহাস অজানা। তবে ঐতিহাসিকদের মতে তা কয়কে শত বছরের বেশি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ছিলেন পাবনায় উৎপাদিত তাঁতের শাড়ী, লুঙ্গি ও গামছার বেশ ভক্ত।
হস্ত চালিত খটখটি বা মেটে তাঁতের লুঙ্গি তৈরিতে এখনো সুনাম রয়েছে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের চাঁচকিয়া এলাকার। গ্রামটিতে ঢুকতেই কানে আসে ছন্দময় খটখট শব্দ। সকালে সুতা, চরকি, বাটাম, বাঁশ, মাজনি নিয়ে শুরু হয় তাঁতীদের ব্যস্ততা। ব্লিচিং দিয়ে সুতা ধোলাই করে রঙ করা হয়। এরপর রোদে শুকানো সুতা পেঁচিয়ে তাঁতে পরম মমতায় লুঙ্গি বোনানো শুরু করেন তাঁতীরা। দিনে একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ দুটা লুঙ্গি তৈরি করতে পারেন।
চাঁচকিয়া ছাড়াও সদরের ষাটগাছা, ধানুয়াঘাটা, জালালপুর, দোগাছি এবং সাথিয়া, সুজানগর, ও বেড়া উপজেলায় তাঁতের লুঙ্গি তৈরী হয়। দেশের বাজার ছাড়াও গুনগত মানের কারনে এসব লুঙ্গি রফতানি হচ্ছে মালয়েশিয়া, বার্মা, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
কিন্ত যান্ত্রিক সভ্যতার সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে হস্তচালিত তাঁত হারিয়েছে সুদিন। সময়ের চাহিদায় হস্ত চালিত তাঁতের জায়গায় এসছে যন্ত্র চালিত তাঁত। এই তাঁতে কম সময়ে অধিক উৎপাদন হলেও মেশিনের দাম ক্ষুদ্র তাতিদের নাগালের বাইরে। তাই কুটির শিল্প থেকে আধুনিক তাঁত শিল্প এখন চলে গেছে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে। তবে ভালো নেই তারাও। উৎপাদন ও বিক্রয়মুল্যের সমন্ময় না থাকায় ক্রমাগত লোকসান গুনছেন বলে জানালেন তারা। কেউ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে করছেন ব্যাংক লোন ।
এমন প্রতিকুলতায় টিকে থাকা পাবনার লুঙ্গি বিভিন্ন কোম্পানীর ব্র্যান্ডিংয়ে বিদেশে রপ্তানী হলেও প্রান্তিক তাঁতীদের ভাগ্য পরিবর্তনে তা কোনই কাজে আসেনি। এ পরিস্থিতিতে সরাসরি রপ্তানীর সুযোগ ও তাঁতব্যাঙ্ক গঠন করে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা চান তারা।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কর্তৃক ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী পাবনায় তাঁতির সংখ্যা-৫৪,৯২১ জন ও তাঁতের সংখ্যা-৩৪,২২১ টি। যেখানে চালু তাঁতের সংখ্যা-২৩,৯৭৫ আর বন্ধ হয়ে গেছে ১০,২৪৬ টি তাঁত।
সংকট আর সম্ভাবনার দোলাচলে দ্যোদুল্যমান পাবনার তাঁতশিল্প আজ নানা প্রতিকূলতায় হারাতে বসেছে অতীত ঐতিহ্য। এখন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আর কার্যকর উদ্যোগই পারে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্য ফেরানোর পাশাপাশি এই শিল্পটিকে বাচিয়ে রাখতে।