Рет қаралды 59
নরসিংদী জেলার, ডাঙ্গা ইউনিয়নের পলাশ উপজেলায় অবস্থিত উদ্ধব সাহার জমিদারবাড়ি।
এবারে নতুন গন্তব্য, উদ্ধব সাহার বাড়ি। এরও ইতিহাস খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
উদ্ধব সাহার জমিদারবাড়িটি লক্ষণ সাহার জমিদারবাড়ি থেকে খানিকটা দূরেই অবস্থিত। হেঁটে গেলে হয়তো মিনিট পাচেক লাগবে। লোকাল কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু তারা বলছিল না। সবাই লক্ষণ সাহার বাড়িই দেখিয়ে দিচ্ছিল। তাই ম্যাপই ভরসা। গুগল ম্যাপে ‘উদ্ধব সাহার বাড়ি’ নামে যে জায়গাটা পাওয়া যায় সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম। রাস্তা থেকেই বাড়িটা দেখা যাচ্ছিল, সুতরাং বুঝতে পারছিলাম ঠিক জায়গাতেই উপস্থিত হয়েছি।
ইতিহাসের খানিকটা
উদ্ধব সাহার জমিদারবাড়ি নাকি পাটের ব্যবসার একদিনের লাভ থেকে বানানো হয়েছিল। উদ্ধব সাহা পাটের ব্যবসা করতেন। সে বছর প্রচুর লাভ হচ্ছিল পাটের ব্যবসায়। সেই লাভ থেকে একদিনের লাভ দিয়ে এই বাড়ি বানানো হয়েছিল কলকাতা থেকে কারিগর এনে। এই বাড়িতে প্রতিমাসে সাতদিনের জমকালো অনুষ্ঠান হত। সেরা নাচিয়েদের নাচ, সার্কাস, সাপের খেলা সহ নানারকম বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল সেই অনুষ্ঠানে। তবে সেই অনুষ্ঠান শুধু সমাজের উঁচুতলার লোকজনদের জন্যই ছিল, প্রজাদের জন্য নয়।
জমিদারবাড়ির অন্দরে
দরজাবিহীন খিলান দিয়ে প্রবেশ করলাম জমিদারবাড়ির অন্দরে। এককালে জমকালো এই বাড়ির এখন জীর্ণদশা। তবে এর গাম্ভীর্য এখনো অনুভব করা যায়। অবহেলা-অযত্নে মেঝেতে শ্যাওলা আর ময়লা জমে একাকার। মানুষের বর্জ্যও চোখে পড়ছিল অনেক। পেছনের দিকের কয়েকটা ঘর বাদে বাকি কোন ঘরেই দরজার দেখা নেই। তবে কিছুদিন আগেও যে এখানে মানুষ বসবাস করত তার নমুনা পাওয়া যায়। জমিদারবাড়ির সাথে বেমানান শৌচাগার আর রান্নাঘরের আদলে তৈরি কোমরসমান প্লাটফর্ম সেই আভাসই দেয়। বাড়িটির যেখানে সেখানে আগাছা-পরগাছা জন্মে প্রায় ঢেকে ফেললেও এর রাজসিকতা ঢাকা পড়েনি একটুও।
তবে একটা জিনিস আমার চোখে পড়েছে আর তা হল অন্য দুই জমিদারবাড়ির সাথে এর অস্বাভাবিকরকম অমিল। লক্ষণ সাহা আর শ্রীধাম সাহার জমিদারবাড়িতে যেখানে বাইরের দিকে চমৎকার কারুকার্য দেখা যায়, এই বাড়িতে তেমনটি নেই। ভেতরের দিকে দরজা ও জানালাগুলোর কাঠামোর উপরদিকে খানিকটা অলঙ্করণ দেখা যায় শুধু। আবার এই বাড়ির দেয়ালগুলো এক হাতের চেয়েও বেশি চওড়া, এমনকি ভেতরের দেয়ালগুলোও। কিন্ত অন্য দুটি বাড়ির দেয়াল এত চওড়া নয়। খুব সম্ভবত কলকাতার মিস্ত্রী আনার কারণেই অন্যদুটি বাড়ি থেকে এটি এত আলাদা। তবে ভেতরে ঘুরতে ঘুরতে মনে হচ্ছিল যেন কোন দুর্গের ভেতর ঘুরছি। নিজের ভেতরে এই বাড়িটার গাম্ভীর্য অনুভব করতে পারছিলাম।
বাড়ি থেকে খানিকদূরেই একটা সাদা ছোট্ট মন্দির। এটি এই জমিদারবাড়িরই মন্দির। এখন বাড়িটির মতই মন্দিরেরও জীর্ণশীর্ণ দশা। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। যদ্দূর জানি এই বাড়িটিও ভাঙার তোড়জোড় চলছে। রক্ষণাবেক্ষণের খরচা অনেক বেশি তাই ধরে রাখা যাচ্ছে না। এমনিতেও একদিন ভেঙে পড়বে নিজে নিজেই। এর চেয়ে দ্রুত ভেঙে ফেলাই হয়তো বেশি ভালো বলে মনে করছেন উদ্ধব সাহার বংশধরেরা।