আমরা দুঃখিত মহাশয়🙏🏼

স্বামী সোমেশ্বরানন্দজী মহারাজের কলমে..🙏 **************************** ○○○○ ছোট্টুদার কাহিনী ○○○○ ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ নরেন্দ্রপুরেই শুনেছিলাম কথাটা। স্বামী লোকেশ্বরানন্দজী বেশ কয়েকজন গুন্ডার জীবন পাল্টে দিয়েছেন। এমন একজনকে দেখতে চেয়েছিলাম কৌতূহল নিয়ে। খবর নিয়ে গেলাম এক বস্তিতে। ওখানে মিশনের কাজ চলছে। ছোট্ট এক দোতলা বাড়ি। সাধুরা গেলে নীচে থাকেন। উপরে একটা ছোট ঘর উপাসনার। সিঁড়ি দিয়ে উপরে গেলাম প্রণাম করতে। দেখি যে ঠাকুর-মা-স্বামীজির ফটো রয়েছে ছোট বেদীতে। সামনে বসে একজন ধ্যান করছেন, গায়ে গেরুয়া চাদর। প্রণাম করে বেরিয়ে আসছি। দেখি তিনিও উঠে পেছনে এলেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করে নীচের এক ঘরে বসিয়ে প্রসাদ দিলেন। আমি প্রশ্ন করে জানলাম তিনিই ছোট্টুদা। বললাম, তার কথা লিখতে চাই এক পত্রিকায়। তিনি কিন্তু রাজি ন'ন। অনেক অনুরোধের পর মত দিলেন, কিন্তু তার নাম ও জায়গা উল্লেখ করা চলবে না। রাজি হলাম। পুরনো লেখাগুলির মধ্যে খুঁজে পেয়ে, আজ সেটা সংক্ষেপে তুলে দিচ্ছি এখানে। ● আচ্ছা ছোট্টুদা, শুনেছি প্রথম জীবনে আপনি গুন্ডা ছিলেন। শুধুই মারধোর ,নাকি খুন-টাকা আদায়-অপহরণ ইত্যাদিও করেছেন? ‌‍¤ কি যে বলেন মহারাজ! এ লাইনে এসব থাকেই। এখন অনুতাপ হয় সেসব মনে হলে। ‌● পুলিশের হাতে ধরা পড়েন নি কখনও? ¤ হ্যাঁ, কিন্তু পরে জামিন পেয়েছি। বেরিয়ে এসে আবার শুরু করেছি। ‌● খারাপ লাগতো না এসব করতে? ¤ না তখন শুনতাম যে, বড়লোকেরা আমাদের শোষণ করে ধনী হয়েছে। আর ওদের জন্যই আমরা গরীব, বস্তিতে থাকি। তাই ওদের উপর অত্যাচার করতে ভালোই লাগতো। প্রতিশোধ নিতাম আমরা এভাবে। ‌● লোকেশ্বরানন্দ মহারাজের সাথে আলাপ হলো কিভাবে? ¤ একবার পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাচ্ছি। হঠাৎ রাস্তায় এক সাধুকে পেলাম। পা জড়িয়ে ধরে বললাম, আমায় বাঁচান, পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে আমায় গ্রেপ্তার করতে চাইছে। তিনি তখন পুলিশের সঙ্গে কথা বললেন। থানায় গিয়ে অনুরোধ করলেন : চারবার জেলে পাঠিয়েও এর মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারা যায় নি। এবার আমাকে সুযোগ দিন। আমি চেষ্টা করে দেখি। ‌● পুলিশ ছেড়ে দিল আপনাকে? ¤ জানিনা কি কথা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। পরে শুনেছি, বিধান রায়ের কথায় আমাকে তুলে দেওয়া হয় ঐ সাধুর হাতে। ইনিই লোকেশ্বরানন্দ মহারাজ। ‌● আশ্রমে গিয়ে রইলেন আপনি? কেমন লাগতো? ¤ খুব খারাপ। সাধুদের রান্না খেতে হতো। তেল-লঙ্কা-মশলা কিচ্ছু থাকতো না, বিস্বাদ ! এর উপর মদ জুটছে না! দু'দিন বাদে ঘর থেকে বেরিয়ে চুপিচুপি পালাচ্ছি। হঠাৎ চিন্তা এল মনে,-- বাইরে তো সবাই আমাকে গুন্ডা বলে, খুনী বলে, ঘেন্না করে। পৃথিবীতে একজনই আমাকে ভালবাসে, আর তাঁকেই ছেড়ে যাবো? ফিরে এলাম ঘরে। ‌● তারপর? ¤ দু'-তিনদিন বাদে মহারাজ ডেকে কিছুক্ষণ গল্প করলেন। বললাম, কোনো কাজ না থাকায় খারাপ লাগছে। তিনি তখন আমায় কাজ দিলেন। তাঁর অফিস ও বারান্দা ঝাঁট দেওয়া, বই-ফাইল সাজিয়ে রাখা। ‌● এই বস্তিতে কিভাবে এলেন ছোট্টুদা? ¤ প্রায় একমাস পরে মহারাজ বললেন এখানে এসে থাকতে। বস্তিতে আশ্রমের সেবাকাজে সাহায্য করা, আর ঠাকুরঘর রোজ পরিষ্কার করে পুজো ও ভোগ দেওয়া। বেলুড় মঠে আমার দীক্ষাও হয়ে গেল। ‌● আপনি পুজো জানতেন? ¤ না না, কিচ্ছু না। মহারাজকে বললাম আমি তো পুজো করা জানি না। তিনি উত্তর দিলেন : ফুল দিয়ে বেদী সাজিয়ে বাংলায় প্রার্থনা করবে একেএকে সবার কাছে। এরপর গুরুদেব যে মন্ত্র দিয়েছেন, তা জপ করবে ১৫ মিনিট। এবার ফল-বাতাসা-জল ভোগ দিয়ে তিনজনকে অনুরোধ করবে খেতে। শেষে একটা ভজন গেয়ে শোনাবে তাঁদের। ‌● এই যে গেরুয়া চাদর পরে জপ-ধ্যান করেন, এই গেরুয়া কে দিল? আপনি কি সন্ন্যাস নিয়েছেন? ¤ না। একদিন মহারাজকে বলেছিলাম সন্ন্যাস নিতে চাই। তিনি বললেন : তোমার যা দরকার সব ঠাকুরকে বলো, এখন তিনিই তোমার বাবা। ‌● তাহলে ঠাকুর অনুমতি দিয়েছেন আপনাকে? ¤ এক রাতে স্বপ্নে ঠাকুরকে দেখলাম। হাসিমুখে কি যেন বলছেন আমাকে। তখন থেকে জপের সময়ে গেরুয়া চাদর গায়ে দিই। ‌● আপনি ঠাকুরকে এরপরও দেখেছেন স্বপ্নে? ¤ হ্যাঁ অনেকবার। একবার একা বসে কাঁদছি এই জন্মের পাপ কাজ মনে করে। সেদিনও রাতে ঠাকুরকে দেখলাম। আরেকবার, পুরনো পাপ কাজ মনে করে ভাবলাম আত্মহত্যা করে এর প্রায়শ্চিত্ত করবো। লোকেশ্বরানন্দ মহারাজকে গিয়ে জানাই। তিনি শুনে বললেন, ঠিক আছে, কিন্তু আত্মহত্যার দিনটা আমি বলে দেব। আমি তো অবাক! এ কাজে আবার দিন-ক্ষণ দেখতে হয় নাকি? মহারাজ বললেন, আমরা সন্ন্যাসী তো, তাই গ্রহ-নক্ষত্র মানি, কোনো কাজ করার আগে পাঁজি-পুথি দেখি। একটা ভাল মুহূর্ত দেখে তোমায় বলবো। জানেন, সেদিন রাতে কি হলো? ঠাকুর স্বপ্নে এসে দেখা দিলেন,-- হাসিমুখ, চারদিকে যেন আলো আর আলো। আমার প্রাণটা জুড়িয়ে গেল, আনন্দে ভরে গেল।

😊😊😊😊😊❤

Joy maa shama sabar magal karo maa